অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ শনিবার (১৯ মার্চ) বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কাউন্সিল ভেন্যু রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনের চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশবিশেষ ঘিরে চলছে সবশেষ প্রস্তুতি।
শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন কাউন্সিলের প্রধান অতিথি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে ছয় বছর পর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আয়োজিত কাউন্সিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানেই সীমাবদ্ধ থাকছে। কাউন্সিলের ১২ দিন আগে গত ৬ মার্চ দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন তারা। কাউন্সিলের দিন আর কোনো পদে নির্বাচন হওয়ার সম্ভবনা নেই বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
সবশেষ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল। ওই কাউন্সিলের কয়েকদিন আগে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের দিন তারেক রহমানকে করা হয় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। স্থায়ী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয় কয়েকদিন পর।
সূত্রমতে, এবারও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, দলের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সারাদেশ থেকে আসা ৩ হাজার ১শ’ কাউন্সিলর নেতা-নির্বাচনের দায়ভার খালেদার হাতে ন্যাস্ত করে ফিরে যাবেন যার যার গন্তব্যে।
জানা যায়, বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯, ভাইস চেয়ারম্যান ১৬, মহাসচিব ১, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ১, যুগ্ম মহাসচিব ৭, ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৮টি পদসহ মোট ৪৬টি পদের মধ্যে ৪৩টি পদ শনিবারের কাউন্সিলে ফয়সালা হচ্ছে না।
চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদ দু’টি আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। পদাধিকার বলে এ দু’টি পদ স্থায়ী কমিটির অন্তর্ভুক্ত। মহাসচিবের পদটিও স্থায়ী কমিটির অংশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জন্য আগে থেকেই নির্ধারণ হয়ে থাকা মহাসচিবের পদটিই কেবল শনিবারের কাউন্সিলে ফয়সালা হতে পারে।
সূত্রমতে, আগামী কয়েক সপ্তার মধ্যে জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যসহ ১১৮টি পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারেন খালেদা জিয়া। এ পদগুলো কাইন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটির সম্ভবনা দেখছেন না দায়িত্বশীল নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, কাউন্সিলররা নেতা নিয়োগের ভার চেয়ারপারসনের ওপর ন্যাস্ত করেন। পরবর্তী সময় চেয়ারপারসনই যোগ্য ও সক্রিয় নেতাদের মধ্যে পদ বণ্টন করেন। আমাদের গঠনতন্ত্রেও বিষয়টি বলা আছে এভাবে- বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস থাকবে ঢাকায়। দলের একজন চেয়ারম্যান (চেয়ারপারসন) থাকবেন। তিনিই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দেবেন।
এদিকে কর্মকর্তা পদে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১১৮ জন বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক নেতা নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হলেও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে বাকি ২৬৫ জন বা প্রয়োজনীয় সংখ্যক নেতা নিয়োগ দেওয়া আগামী এক/দেড় মাসের মধ্যে সম্ভব হবে না বলে জানা যায়।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য কয়েক হাজার সিভি জমা পড়েছে দায়িত্বশীল নেতাদের হাতে। এখান থেকেই বাছাই করতে হবে ২৬৫ জনকে। এ কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা।
তবে শনিবারের কাউন্সিলে নেতা নির্বাচনের ‘আসল’ কাজটি না হলেও তিন দফার ব্যর্থ আন্দোলনে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপি আবার চাঙা হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
৩ হাজার ১ শ’ কাউন্সিলর, ৮ থেকে ৯ হাজার ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি, বিদেশি মেহমান ও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী মিলে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার লোকের অংশগ্রহণে একটা সফল কাউন্সিল করার ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। অদূরদর্শী কর্মসূচির পর দীর্ঘদিন ঘরে ঢুকে থাকা নেতা-কর্মীরা কাউন্সিল উপলক্ষে ফের বের হয়ে আসতে পেরেছেন- এটিই বিএনপির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন দলটির নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, হামলা মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীরা কাউন্সিল উপলক্ষে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে এটি কাজে লাগাবে বিএনপি।